১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে হিটলারের সাথে

বীরেন রায়
১৯০৯-১৯৯৬
বিমান চালক, লেখক, রাজনীতিবিদ।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ আগষ্ট কলকাতার বেহালা এলাকার এক বিত্তশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম সৌরেন্দ্র রায়, মায়ের নাম শ্যামসুন্দরী।

তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স-সহ স্নাতক হন।  বীরেন রায় তৎকালীন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতনি মিনি'র প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এই কারণে তাঁকে  তাঁকে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তিনি এম.এ., এম আর এ এস ডিগ্রি লাভ করেন। ব্রাহ্মকন্যা মিনির  প্রতি তাঁর আকর্ষণ রোধ করার জন্য, এক লক্ষ টাকার পণ ও বিমান কিনে দেওয়ার টোপ দিয়ে জয়পুরের এক কন্যা মেঘমালা দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ দেওয়া হয়। এই বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল ১৯৩৯ সালে  সঙ্গে। পরে তার পিতাই তার শ্বশুরের হয়ে বিমান কিনে দেন। এদিকে এক লক্ষ টাকা আদায় করতে তিনি বিমানে জয়পুর যান শ্বশুরের কাছে। পরে তিনি পিতার কৌশল ইত্যাদি সবকিছুই অনুধাবন করতে পারেন। 

তিনি দক্ষিণ কলকাতা পৌরাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। এই সূত্রে তিনি ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানির বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অফ মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস -এ প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সময়ে তাঁর সাথে জার্মানির চ্যাঞ্চে লর এ্যাডলফ হিটলারের, সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। পরে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছিল।  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথেও তাঁর বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। তিনি অনেকবার তিনি তাঁর বৈমানিক হিসাবে সঙ্গী হয়েছিলেন। কিন্তু নেতাজীর ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতেন, কিন্তু কোন কথাই বাইরে প্রকাশ করেন নি। পরে তিনি সমাজতান্ত্রিক ভাবনায়  উদ্বুদ্ধ হন। তিনি কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ-সহ বহু কমিউনিস্ট কর্মীদের গোপন আস্তানা ছিল তার বালিগঞ্জের বাড়িটি। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র "স্বাধীনতা" জন্য প্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন। এ সকল কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তিনি বেহালার সিনেমা হল (অজন্তা, ইলোরা, নটরাজ), মাতা শ্যামাসুন্দরীর বালিকা বিদ্যালয়, আর্য সমিতি, চ্যারিটেবল চিকিৎসা কেন্দ্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন।

বীরেন রায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখালেখিও করতেন। ব্রিটিশ ভারতে শ্রমিক আন্দোলন, বিমান চালনা, যোগা ও রেডিও ও অন্যান্য যন্ত্রাদি নির্মাণ সম্পর্কে বই লিখেছেন। বাংলা ছাড়াও ইংরাজী হিন্দি ও জার্মান, তিনটি ভাষায় তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা আটচল্লিশ। অনেক পত্র-পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, সম্পাদনা করেছেন কয়েকটি পত্রিকা।

তিনি পুরানো দিনের বেহালা সম্পর্কে নানান কথা তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন- আত্মশক্তির গল্পকথা শীর্ষক একটি গ্রন্থ। ব্রিটিশ ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের উপর একটি নাটক রচনা করেন, কিন্তু ব্রিটিশ শাসক ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে বাজেয়াপ্ত করে। 
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি ৮৬ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন। তার জীবদ্দশাতেই বেহালার একটি রাস্তার নামকরণ হয়- বীরেন রায় রোড।

তাঁর রচিত উল্লেকযোগ্য গ্রন্থ