মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত
হয়েছিল
নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ
করলে, নিখিল ভারত মুসলিম লীগের পাকিস্তান অংশের নাম হয় মুসলীম লীগ (পাকিস্তান)।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালি জাতীয়তাবাদী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হক দ্বারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলিম লীগে প্রথম বারের মতো ভাঙ্গন ঘটে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত জনপ্রিয়তা ও সমর্থন অর্জন করে।
এই সময় থেকে দলের বাকি অংশ মুসলীম লীগ নামেই থেকে যায়। এই সময় মুসলীম লীগের নেতৃত্বে
ছিলে- লিয়াকত আলী খান, খাজা নাজিমউদ্দিন, মোহাম্মদ আলী বগুড়া, চৌধুরী মুহাম্মদ আলি, এবং ইবরাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগড়।
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান গণপরিষদের নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। তবে সংখ্যালঘু দলের নেতা হিসেবে চৌধুরী মুহাম্মদ আলি এবং ইবরাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগড়কে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই বছরেই মুসলিম লীগ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধাচারী একটি দল গঠন করা হয়। এই দলটির নাম
রাখা হয়েছিল পাকিস্তান রিপাব্লিকান পার্টি। এই দলের মূল প্ররোচনাকরী ছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হন।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খান সামরিক আইন ঘোষণার পর দলটি ভেঙে দেওয়া হয়।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত
হয় কনভেনশান মুসলিম লীগ। সে সময়ে এই দলটির অবশিষ্ট অংশ কাউন্সিল মুসলিম লীগ
নামে পরিচিতি পায়।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কনভেনশন মুসলিম লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
এই নির্বাচনে কনভেনশন মুসলিম লীগের নির্বাচনী প্রতীক ছিল গোলাপ ফুল।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোহতারমা ফাতিমা জিন্নাহ পরাজিত হওয়ার পর, তিনি
তাঁর অনুসারেদের নিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (ফাংশনাল) নামে একটি দল গঠন করেন। এই
দলটির সাধারণ নাম ছিল মুসলীম লীগ (এফ)। এই দলের পীর পাগারা সৈয়দ শাহ মর্দান শাহ।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে কায়ুম খান মুসলীম লীগ ত্যাগ করেন এবং নতুন একটি দল গঠন করেন। এই
দলের নাম ছিল মুসলীম লীগ কায়ুম। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের সাধারণ
নির্বাচনে অংশ নেন। এই দলটি ৯টি আসন লাভ করেছিল।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন) এবং কাউন্সিল মুসলিম লীগ সহ সকল ধর্ম ভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ পাস করা হয়। ১৯৭৬ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশ মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এর রক্ষণশীল
অংশের নেতা ছিলেন আবদুস সবুর খান এবং উদারপন্থী দলের নেতা ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। শাহ আজিজুর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে
যোগ দেয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে আবদুস সবুর খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সংসদ নির্বাচনে ২০ টি আসন জিতেছিল।
ৱ
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ খান জানেজু, রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ জিয়া-উল-হকের একনায়কতন্ত্রের সমর্থকদের মধ্যে একটি আলাদা দল সংগঠিত করেন।
এই দলটি পাকিস্তান মুসলিম লীগ নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে জিয়া-উল-হকের মৃত্যুর পর মিয়া মুহাম্মদ নওয়াজ শরীফ- মুসলীম
লীগ নাম নিয়ে নতুন দল তৈরি করেন। এই দলটি পরিচিত পায় মুসলীম লীগ (নওয়াজ)।
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক মতপার্থক্য দেখা দেয় যা শেষ পর্যন্ত দলের অভ্যন্তরে আরেকটি দল গঠনের দিকে পরিচালিত করে। সুজাত হুসাইনের নেতৃত্বে ভিন্নমতাবলম্বীরা ১৯৯৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পক্ষে এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান ও জয়েন্ট-চিফ অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল পারভেজ মুশারফের নেতৃত্বের পক্ষে দৃঢ় ও সোচ্চার সমর্থনের আহ্বান জানান। ২০০২ সালে ভিন্নমতাবলম্বী নেতারা রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফের সরকারকে কেন্দ্র করে দলটি চালু করে। পরে এটি মোশাররফ সরকারের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয় এবং তাদের নিজস্ব প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শওকত আজিজকে নিয়োগ করে।