চণ্ডীদাস
মধ্যুগীয় বাংলা সাহিত্যের একধিক কবির নাম। কবিতার ভণিতার বিচারে
চারজন চণ্ডীদাসের
নাম পাওয়া যায়। এঁরা একই ব্যক্তি ছিলেন না কি, পৃথক পৃথক ব্যক্তি
ছিলেন, এ নিয়ে বিতর্ক। শুধু ভণিতার নামে বিচারে চার জন পৃথক কবি হলেও- প্রশ্ন জাগে
এঁরা কি একই সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন? এসব প্রশ্নের মীমাংশা হয় নি।
<১৩৪২ খ্রিষ্টাব্দ
সামস্উদ্দিন
ইলিয়াস শাহ বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসেবে
রাজত্ব শুরু করেন। আর ১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি বাংলাদেশের সিলেট থেকে উত্তরে
বারাণসী এবং উত্তর-পূর্ব বঙ্গ সকল অঞ্চল জুড়ে তিনি তাঁর অধিকারে আনেন।
ডঃ শহীদুল্লাহ,
মুহম্মদ মতে এই সময় বাঙালি কবি
চণ্ডীদাস জীবিত ছিলেন।
১৯০৯
খ্রিষ্টাব্দ বসন্তরঞ্জন রায় বাঁকুড়া জেলা থেকে
বড়ুচণ্ডীদাস এবং চণ্ডীদাসের
ভণিতায় একটি পুথি আবিষ্কার করেন।
কিন্তু গ্রন্থটির নাম রাখা
হয়েছিল বড়ুচণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। কারণ, ধরে নেওয়া হয়েছিল, পদকর্তার মূল
নাম বড়ুচণ্ডীসদাস, ছন্দের সাম্য রক্ষার্থে পদকর্তা, সংক্ষেপে চণ্ডীদাস নাম ব্যবহার
করেছিলেন। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থটি বন-বিষ্ণুপুরের
নিকটবর্তী কাঁকিল্যা নিবাসী দেবেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে ছিল। এই
গ্রন্থটি ১৩২৩ বঙ্গাব্দে কলকাতা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।
১৩৪১ বঙ্গাব্দে
মনীন্দ্রনাথের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল দীন চণ্ডীদাসের পদাবলী। এই গ্রন্থের
পদগুলোর ভণিতায় পাওয়া যায়- চারজন পদকর্তার নাম। এঁরা হলেন-
বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস ও চণ্ডীদাস।
এই গ্রন্থ প্রকাশের পর থেকে চণ্ডীদাস সমস্যার উদ্ভব হয়।
দীন চণ্ডীদাসের পদাবলী-
নামকরণ করা হলেও, ধারণা করা হয়- এটি সকল 'চণ্ডীদাস'-এর রচিত পদের সংকলন।
ধারণা করা হয়, দীন চণ্ডীদাস ও দ্বিজ চণ্ডীদাস ছিলেন বড়ুচণ্ডীদাসের
পরবর্তীকালের পদকর্তা। এঁরা ছিলেন চৈতন্য-পরবর্তী যুগের পদকর্তা।
বড়ুচণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ও দীন চণ্ডীদাসের পদাবলী- গ্রন্থের সূত্রে যে
চণ্ডীদাসের উল্লেখ পাওয়া যায়, তার স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে- চণ্ডীদাস নামে। তব
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রচয়িত বড়ুচণ্ডীদাসকেই সাধারণভাবে চণ্ডীদাস বলা হয়। যেমন- বিখ্যাত
পদ- ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’-এর রচয়িতা চণ্ডীদাস। এই চণ্ডীদাস এবং বড়ু
চণ্ডীদাস অভিন্ন বিবেচনা করা হয়। এই চণ্ডীদাসের প্রেমিকা ছিলেন রজকিনী রামী। এই
প্রণয় নিয়ে বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, চলচ্চিত্রে নানা শিল্পকর্মের সৃষ্টি হয়েছে।